• শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৬:২৩ অপরাহ্ন

ওজন বাড়া-কমার সঙ্গে ঘুমের কোনো সম্পর্ক আছে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

রিপোর্টারের নাম / ১ টাইম ভিউ
আপডেট সময়: শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৬:২৩ অপরাহ্ন

ঘুম এমন একটা ‘ইস্যু’, যা ঠিকমতো না হওয়া নিয়ে মানুষের অভিযোগ বিস্তর, কিন্তু কোনো মাথাব্যথা নেই। কোভিডপরবর্তী বিশ্ব স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে মানুষের। বাস্তবে ওবেসিটি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। ডাক্তাররা বলছেন, ওবেসিটি ‘মর্ডান এপিডেমিক’। সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, অর্থাৎ অলস জীবনযাপনই এর জন্য দায়ী। জাঙ্ক ফুড খাওয়া, এক্সারসাইজ় না করা, জীবনে অত্যধিক স্ট্রেস— এগুলোই শুধু ধীরে ধীরে আপনাকে ওভারওয়েট করছে, তা নয়, এর সঙ্গে দায়ী ঘুমও।

ঘুম এমন একটা ‘ইস্যু’, যা ঠিকমতো না হওয়া নিয়ে মানুষের অভিযোগ আছে; কিন্তু মাথাব্যথা নেই। বলা হয়— ঘুম হলো মানবশরীরের নিজে থেকে তৈরি করা ‘ন্য়াচারাল মেডিসিন’, অথচ ঘুমের জন্য আমাদের এক ফোঁটাও কসরত করতে হয় না। শরীরের জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে একটা হলো ঘুম। ইঁদুরদৌড়ের জীবনে ঘুম না হওয়া, রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া, চোখের পাতায় ঘুম ধরতে দেরি হওয়া, রাতে মেরেকেটে ৫ ঘণ্টার ঘুম — এগুলো যেভাবে ‘নিউ নর্মাল’ বা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, তাতে শরীরের ক্ষতি মারাত্মক। ঘুম না হওয়ার জন্য ওবেসিটির শিকার খুব কমন।

ঘুম ও ওবেসিটির সম্পর্ক আলোচনা করে জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ঘুমের সঙ্গে ওজন বৃদ্ধির একটা জটিল সম্পর্ক রয়েছে। যদি আপনার একদম ঘুম না হয়, তা হলে রোগা হতে শুরু করবেন। ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমবে। স্ট্রেস লেভেল যদি মারাত্মক বেশি থাকে, দেহে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়বে এবং ওজন কমতে থাকবে। কিন্তু ঘটনাচক্রে এ ধরনের উদাহরণ খুব কম। সমস্যাটা হলো, আজকাল বেশিরভাগ মানুষের ঘুম গভীর হয় না। তাতে শরীরকে শান্ত করা বা ‘বডি রিপেয়ারিং’-এর জন্য় যেসব হরমোন প্রয়োজন, সেগুলো ডিপ্রেসড হয়ে যায়। আর স্বাভাবিকভাবেই খিদে বাড়ে। এতে ওজনও বাড়ে।

ঘুমের সঙ্গে মেটাবলিক ও এন্ডোক্রাইন স্বাস্থ্যের সরাসরি যোগ রয়েছে। আর এই দুই বিষয় ওবেসিটির সঙ্গেও জড়িত। এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন ‘ইনস্টিটিউট অফ স্লিপ সায়েন্স’-এর প্রধান ও ক্লিনিক্যাল রিসার্চার সোমনাথ মাইতি। তিনি বলেন, ‘আমাদের শরীরে দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হরমোন নির্গত হয়। প্রতিটা হরমোনের কাজও ভিন্ন। তেমনই ঘুমের সময় দেহে বেশ কিছু হরমোন নির্গত হয়। সেগুলো শরীরের রিপয়ারিংয়ের কাজ করে। কিন্তু ঘুম যদি ভালো না হয়, তখন হরমোনের ভারসাম্যও বিঘ্নিত হয়। এটাই ওবেসিটির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।’

ঘুমের সময় যে হরমোনগুলো নির্গত হয়, তা আমাদের বিপাক প্রক্রিয়া ও এন্ডোক্রাইন স্বাস্থ্যের জড়িত। ঘুম গাঢ় বা ভালো না হলে, দেহে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ঘুমের সময় যে হরমোন নির্গত হওয়ার কথা, না হলে তার সিক্রেয়শন বন্ধ হয়ে যায়। তার সঙ্গে স্ট্রেস হরমোনের লেভেল বাড়ে। এমনকি ইনসুলিন হরমোনের ভারসাম্যও নষ্ট হয়। তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে। সেটাও বিপাক প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে এবং ওবেসিটির ঝুঁকি বাড়ায়।

সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করলে ঘুম না হওয়ার জন্য বিপাকক্রিয়া ঠিকমতো হয় না এবং দেহে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। আর মেটাবলিজম ভালো না হলে এবং দেহে হরমোনাল ইমব্যালান্স তৈরি হলে ওজনও বাড়বে। সুতরাং ওজনকে বশে রাখার জন্য যতটা বেশি এক্সারসাইজ ও ডায়েটে নজর দেওয়া দরকার, ততটাই ঘুম নিয়ে সচেতন থাকা উচিত।

ওবেসিটির ঝুঁকি এড়াতে হলে প্রাথমিকভাবে ডায়েটে নজর দিতে হবে এবং এক্সারসাইজ করতে হবে। ডা. বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ঘুমের চক্র খারাপ হলে ভুলভাল খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। কিন্তু ঘুম মোটামুটি হলে জাঙ্ক ফুড খাওয়ার পর যদি দৌড়ে ক্যালোরি খরচ করে ফেলেন, তা হলে আর ওবেসিটির ভয় নেই। কিন্তু ঘুম ভালো না হলে তা নিয়ে ভয় আছে। ঘুম না হলে ওবেসিটির পাশাপাশি হাইকোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ডিপ্রেশনের ঝুঁকিও বাড়ে। সুতরাং, ঘুম নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার আছে। ঘুম যাতে ভালো হয় তাই স্লিপ হাইজিন মেনে চলা উচিত বলে জানিয়েছেন সোমনাথ।

স্লিপ হাইজিন—

১. নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন

২. বিছানায় ফোন নিয়ে যাবেন না

৩. ঘুম না এলে বই পড়ুন, গান শুনুন

৪/ বিকালের পর চা-কফি এড়িয়ে চলুন

৫.মানসিক চাপ কমান


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *